বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার রাতে। বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা থেকে ৪টার মধ্যে যেকোনো সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে এটি। আর এর মাধ্যমে ৫৭তম স্যাটেলাইট সদস্য দেশের তালিকায় নাম লেখাবে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে স্যাটেলাইটটির উৎক্ষেপণ যান ফ্যালকন-৯-এর সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। কৃত্রিম এই উপগ্রহের মাধ্যমে দেশের টেলিযোগাযোগসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে থাকবে নিত্য নতুন সুবিধা।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ২২ হাজার মাইল ওপরে মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থান করবে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে দেশটির বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে এটি পৌঁছাবে নির্ধারিত কক্ষপথে, উৎক্ষেপণের আট দিন পর। প্রায় দুই হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। ৩ দশমিক ৭ টন ওজনের কৃত্রিম স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বিশ্বে স্যাটেলাইট সদস্য দেশের মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
টেলিভিশন ও বেতার সম্প্রচার, ইন্টারনেট সেবাদান, ভি-স্যাটসহ ৪০ ধরনের সেবা দেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এটি সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলি যোগাযোগব্যবস্থা বহাল রাখবে। এর আগে এসব সেবার জন্য দেশের টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা টোলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সিঙ্গাপুর, হংকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট ব্যবহার করত। আর এসব সেবা এখন নিশ্চিত করবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা শুধু বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ই করব না, এই ট্রান্সপন্ডারগুলা বাইরে বিক্রির ফলে বাইরে থেকেও আরো বৈদেশিক মুদ্রা আসবে। আমরা আশা করি, স্যাটেলাইটের জীবনের অর্ধেক বয়সেই আমরা পুরোপুরি টাকাটা তুলে আনতে হবে। এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুধু ডাটা না, ডাটার সঙ্গে আমরা ভয়েসও দিতে পারব।’
প্রায় ১৫ বছর মিশনের কৃত্রিম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ কক্ষপথে যাওয়ার পর ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ-ভারত হয়ে তাজিকিস্তান পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করবে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থেকে ৪০ মেগাহার্টজ গতিতে। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি থাকবে সি ব্যান্ডের।
এদিকে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে কৃত্রিম উপগ্রহটির ২০টি ট্রান্সপন্ডার থেকে ফ্রিকোয়েন্সি রপ্তানি করবে বাংলাদেশ।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘যে অঞ্চলে যতটুকু কাভারেজ আছে আমি সেটার দিকেই যদি নজর দেই : সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের ভেতরে কিন্তু অত্যন্ত চমৎকার কাভারেজ আমরা পেতে যাচ্ছি। আমরা যদি সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি এবং তার ওপর ভিত্তি করে যদি আমাদের নীতিমালা প্রণয়ন করি, তাহলে কিন্তু আমরা সফল হতে পারব। ১৫ বছরের মধ্যে এই তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ উঠিয়ে আনতে হবে এবং তার পরে লাভও করতে হবে। এই স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক সাফল্য না হবার কোনোই কারণ নাই।’
এদিকে, স্যাটেলাইটটি প্রাথমিকভাবে পরিচালনা করবে ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস। তবে পরবর্তী সময় এটি পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি শক্তিশালী দেশীয় জনশক্তি।