গতানুগতিক বিষয়গুলোর বাইরেও শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের বিষয় পড়ছেন, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন। দেশ-বিদেশে তৈরি হচ্ছে কাজের আরও নানা ক্ষেত্র। স্বপ্ন নিয়ের গত সংখ্যায় ভিন্ন কিছু বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনজন শিক্ষার্থী। আজ আরও দুজন জানাচ্ছেন তাঁদের পড়ার বিষয়টি সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক, আপনিও যদি আপনার পড়ার বিষয় সম্পর্কে জানাতে চান, লিখতে পারেন স্বপ্ন নিয়ের ঠিকানায়: স্বপ্ন নিয়ে, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। ফেসবুক: facebook.com/swapno.nie। ই–মেইল: swapno@prothom-alo.info। লেখার সঙ্গে আপনার পুরো নাম, ঠিকানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও ফোন নম্বর উল্লেখ করতে হবে।

আফসারা জাহিন চৌধুরী, প্রথম বর্ষ, বিমান প্রকৌশল বিভাগ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
সারা বিশ্বে বিমান প্রকৌশলের চাহিদা আছে

ছোটবেলা থেকে ‘অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হব’—এমন চিন্তা কখনো মাথায় আসেনি। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। বিজ্ঞান ভালো লাগত। মূলত যখন ক্লাস নাইনে পড়ি, তখন থেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়েছি। সামনে যখন এইচএসসি পরীক্ষা, একদিন দেখি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি দল আমাদের ক্যাম্পাসে। উদ্দেশ্য, আমাদের মধ্য থেকে ভবিষ্যৎ ফ্লাইং ক্যাডেট বেছে নিতে আমাদের মনে আগ্রহ জাগানো। তাঁদের চমৎকার উপস্থাপনায় অভিভূত হয়ে ভালোবেসে ফেলি বিমানবাহিনীকে। সেই থেকে বিমানের প্রতি অন্য রকম আকর্ষণ কাজ করে।

আমার খুব সৌভাগ্য, বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়ার এবং বিমান নিয়ে পড়ার—দুটো সুযোগই আমি পেয়েছিলাম। কোনটা বেছে নেব, সেটা আমার জন্য ছিল একটা মধুর সমস্যা। শেষ পর্যন্ত পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিমান প্রকৌশলই বেছে নিই। ভর্তি হই আমার স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে।

বিষয়টি অন্যান্য বিষয় থেকে অনেকটাই ভিন্ন। বিমান প্রকৌশল বেছে নেওয়ার পেছনে কয়েকটি বিশেষ কারণ ছিল। আমি যত দূর জানি, সারা বিশ্বে সবচেয়ে খ্যাতিমান প্রকৌশলবিদ্যা হলো বিমান প্রকৌশল। বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে এর চাহিদা অনেক বেশি। আকাশপথের যাত্রায় আমরা যদি উন্নতি করতে চাই, তাহলে বিমান প্রকৌশল হতে পারে আমাদের বড় হাতিয়ার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন বিষয় বাছাইয়ে ইচ্ছার পাশাপাশি সাহসও প্রয়োজন। চাকরির বাজারে এর নাম তুলনামূলক কম শোনা যায় বলে অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সাহস জোগাতে পারেন না। বাংলাদেশে বর্তমানে অ্যাভিয়েশন কোম্পানি আছে তিনটি। যেহেতু সম্ভাবনা আছে, তাই অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই সংখ্যাটা আরও বাড়বে। এ ছাড়া বিদেশে কাজ করার সুযোগ তো আছেই। যাঁরা বিমান প্রকৌশলে পড়ার চ্যালেঞ্জ নিতে চান, তাঁদের স্বাগত।

রিফাত ইবনে হক, চতুর্থ বর্ষ, অপরাধবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পড়ার বিষয়টা মজার

২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি প্রথমে শান্তি ও সংঘর্ষ বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। সে বছরই ঢাবিতে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগটি চালু হয়েছে। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্য এটা পড়ানো হয় আরও আগে থেকেই। সেখানে বড় ভাইয়েরা ছিলেন। তাঁরা বললেন, ‘তুমি তো অপরাধবিজ্ঞানেও পড়তে পারতে।’ ছোটবেলায় তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা, শার্লক হোমস পড়েছি। তাই নাম শুনেই বিভাগটির ব্যাপারে কিছুটা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। খোঁজখবর নিয়ে ঠিক করলাম, পরের বছর আবার পরীক্ষা দেব।

তখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দেওয়া যেত। ২০১৪-১৫ সেশনে ঘ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে অপরাধবিজ্ঞানে ভর্তি হয়ে গেলাম। মা-বাবা আমার সিদ্ধান্তের ওপরই ভরসা রেখেছিলেন, তাই আরও সাহস পেয়েছি।

আমাদের পড়ার বিষয়টা মজার। সিগমন্ড ফ্রয়েড যেমন অপরাধীদের মনোজগৎ বুঝতে আমাদের সাহায্য করেন, তেমনি সিজার লমব্রসোর দেওয়া তত্ত্ব থেকে আমরা একজন অপরাধীর শারীরিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করি। আবার সামাজিক বিশ্লেষণের মাধ্যমেও আমরা অপরাধজগৎ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

বিষয়টা সম্পর্কে মানুষের এখনো খুব ভালো ধারণা নেই। অনেকে ভাবেন, পুলিশ বা গোয়েন্দা বিভাগ ছাড়া বোধ হয় কাজের তেমন কোনো সুযোগ নেই। তা কিন্তু নয়। যেসব প্রতিষ্ঠান অপরাধ বা অপরাধীদের নিয়ে কাজ করে, যেমন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও বা সরকারি পর্যায়েও কাজ করা যায়। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞানে পড়ে বিদেশে স্নাতকোত্তর করছেন, এমন কয়েকজনের কথাও আমি জানি। পুলিশ, র‍্যাব, গোয়েন্দা বিভাগের বড় কর্মকর্তারা আমাদের বিভাগে স্নাতকোত্তর করছেন। সামনে নিশ্চয়ই কাজের সুযোগ আরও বাড়বে।

আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here