কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী এ পি এম সোহেলের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগকর্মীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ।

আজ রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। এ সময় তিনি সরকারকে সোহেলের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দাবিও জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সোহেলের ওপর হামলাকারীদের পরিচয় তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলেন, সোহেলকে মোবাইল, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। শুধু সোহেলকে নয়; আন্দোলনকারী সব নেতাকর্মীকে বিভিন্নভাবে হামলার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।

হামলাকারীদের পরিচয় তুলে ধরে আহত সোহেল বলেন, ‘পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শোভন, জামালপুর জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক এস কে মিরাজ, পরিসংখ্যান বিভাগের মাহফুজ ও বাবু আমার ওপর হামলা করে। এরা সবাই জবি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও শাখা সভাপতি তারিকুল ইসলামের অনুসারী।’

সোহেল বলেন, ‘কোটা আন্দোলন নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের (জবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। আন্দোলনে যাতে না যাই এর জন্য তারা এর আগেও নানাভাবে আমার ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিল। গত বুধবার আমার পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিয়ে বিকেল ৩টার দিকে আমি বের হই। তখন থেকেই ছাত্রলীগের বাবুসহ কয়েকজন নেতাকর্মী আমাকে অনুসরণ করছিল। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট দিয়ে বের হয়ে রাস্তা পার হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে যেতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার গতিরোধ করে। এ সময় আমার সাথে কয়েকজন বন্ধু ছিল। ওরা (হামলাকারীরা) আমাকে এসে বলে, ‘তোমার সাথে একটু কথা আছে, সাইডে চলো।’ তখন আমার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে, ‘ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’ প্রশ্নের জবাবে তারা বলে, ‘কোথাও না, ওর সাথে একটু কথা বলব, তোমরা চলে যাও।’ এরপর ওরা আমাকে নিয়ে ক্যাম্পাসের টিএসসির পাশের গলিতে ঢুকে। সেখানে একটা জায়গায় আমাকে দাঁড় করিয়ে আশপাশে তাকিয়ে তারা সিসিটিভি ক্যামেরা দেখতে পায়। ক্যামেরা দেখে ১০ থেকে ১২ জন ছাত্রলীগকর্মীর একজন বলে ওঠে, ‘এখানে দাঁড়াব না সিসিটিভি সার্কিট ক্যামেরা আছে। অন্য জায়গায় যাই।’ তখন তারা আমাকে বাংলাবাজার গার্লস স্কুল লাগোয়া সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের গলির ভেতর ঢোকায়।’

‘সেখানে দেয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে তারা আমাকে বলে, ‘কিরে আন্দোলন তো ভালোই করলি, কত টাকা পেয়েছিস কোটা আন্দোলন করে? আয় তোকে আন্দোলন শেখাই। তুই না সেলফি তুলতে পছন্দ করিস? তোর দাঁতগুলো তো অনেক সুন্দর। আয় এগুলো ভেঙে দিয়ে সেলফি তুলি।’ এটা বলেই তারা আমার নাকে-মুখে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। এ সময় আমার নাকের নিচে ঠোটের উপরের অংশ ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। আর কয়েকজন রড ও লাঠি দিয়ে আমার পায়ে ও পিঠে আঘাত করতে থাকে। পরে আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে তারা চলে যায়।’

হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে জানিয়ে সোহেল বলেন, ‘বুধবার রাতে আমি নিজে বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেছি। জড়িতদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।’

সংবাদ সম্মেলনে সোহেলের মা তাঁর সন্তানের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানান।

পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতে থেকেই আন্দোলনকারীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। কয়েকদিন আগে আমাদের অন্যতম সহকর্মী সোহেলের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। আমরা তাদের বিচার দাবি করি। একই সাথে সোহেলের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে সরকারকে আহ্বান জানাই।’

হামলাকারীদের বিচার না করলে ছাত্রসমাজ আবারও রাজপথে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সোহেলসহ এ পর্যন্ত সব আন্দোলনকারীর ওপর হামলার বিচার চাচ্ছি। আর আগামীতে এই ধরনের ঘটনা পুনরায় হলে সারা বাংলার ছাত্রসমাজ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here